• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্বশীলতার কোন বিকল্প নেই


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:২৬ পিএম
রোধে দায়িত্বশীলতার কোন বিকল্প নেই
সড়ক দুর্ঘটনা

মোঃ সাইদুর রহমান

সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকে। ২০১৮ সালে কোমলমতী শিক্ষার্থীরা শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর  " নিরাপদ সড়ক চাই " আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা দুটিও প্রমাণ করেছে । সহপাঠী হত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাজপথে। তাদের ৯ দফায় অপরিপক্বতা থাকতে পারে কিন্তু গ্রহণযোগ্যতার কোন অভাব ছিলনা। গত ২২ তারিখে স্মার্ট যুগে চট্টগ্রাম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে  নিরাপদ সড়ক চাই স্লোগানে রাস্তায় নেমেছে চুয়েট শিক্ষার্থীরা। ক্লাস ছেড়ে রাজপথে কেন শিক্ষার্থীরা? দেশকে স্মার্ট করতে হলে পরিবহন খাতকেও স্মার্ট করতে হবে। এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। সময়ের স্পন্দন বুঝতে পারেনি রাষ্ট্র! দেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫৮ লাখ ফিটনেসবিহীন গাড়ী প্রায় ৬ লাখ। ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে অর্ধেকের চেয়েও কম। ২৪% গাড়ি চলে ফিটনেস বিহীন অবস্থায় (টিআইবি) । মোটরসাইকেল চালক চলে বাইসাইকেলের মত। চিত্রই বলে দেয়, রাষ্ট্র পরিবহন খাতে শুধু ব্যর্থ নয়, কার্যকর ভুমিকা নিতেও ভয় পাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনাকে রাষ্ট্র ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীরা মনে করেন ; গাড়ী চললে দুর্ঘটনা ঘটবে এটাই স্বাভাবিক আবার তার সুষ্ঠু বিচার হবেনা এটাও স্বাভাবিক । এই স্বাভাবিকের কারনে অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিন গড়ে ৬৭ জন মানুষ মারা যায় সড়কের বেহালদশা অথবা অদক্ষ চালকের কারনে।  " নিরাপদ সড়ক চাই " এটা যেহেতু সকল মানুষের দাবী।

                   সময়ের বিবর্তে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পথ যত লম্বা হয় মৃতের সংখ্যা তত বাড়ে ।  মানুষ পথের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত এবং শঙ্কিত । সরকারের সকল প্রচেষ্টা , প্রচেষ্টার গর্তে বন্দি । আইন আছে প্রয়োগকারীরা দুর্নীতিবাজ । সরকার, মন্ত্রী সবই আছেন কিন্তু ফিটনেস বিহীন গাড়ী চলে সড়কে।  এদিক দিয়া " সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ " মন্ত্রী সভায় অনুমোদিত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে,  চালক অথবা দায়ী  ব্যাক্তিদের জন্য  যে  ধরনের শাস্তি বিধান রাখা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্বল।  ফৌজদারী দন্ড বিধিতে থাকায় আইনটি আর ভিন্ন কোন সংস্কারের মুখ দেখতে পাবেনা। আমি মনে করি  সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮,  আইনটি অপরিপক্ব এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলার মত না।

বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনার সময় - কাল ভেদে তার তারতম্য ঘটে । যেমন ঈদে, শীতকালে,   বর্ষাকালে  সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায় অস্বাভাবিক ভাবে।  এর বড় কারন দেশের জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছেও যানবাহন ।কিন্তু সেই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না মানুষের মধ্যে সচেতনা। রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনা ৭৪% আর মহাসড়কে ৪৩% ।  প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনায়  নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে না শুধু আইনের সঠিক প্রয়োগ। 

একটা দুর্ঘটনা একটা পরিবারকে সারা জীবনের জন্য দুঃখের প্রদীপ ধরিয়ে দেয় । আর বিধাতার পরম করুণায় যারা বেঁচে যান, তারা পঙ্গুত্ব নিয়ে সমাজে করুণার পাত্র হয়ে বসবাস করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনের অপচয় যেন নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।                          

ট্রাফিক ব্যবস্থার হতশ্রী অবস্থা ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।পথচারীদের অজ্ঞতার কারণে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের সময়ও দুর্ঘটনা কখনো বা অনিবার্য কারন  হয়ে দাঁড়ায়।

যাত্রী কল্যণ সমিতির তথ্যমতে ২০২৩ সালে ৫৩ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় জরুরি চিকিৎসা সেবা নেন। ২০২৩ সালে সড়ক-রেল-নৌপথে  দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৮৫০৫ জন ( যাত্রী কল্যাণ) আর বিআরটি 'র তথ্য মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০২৪ জন। প্রতি বছর গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সড়কে লাশের মিছিল। তথ্যকোষে গরমিল , ভূল থাকা অবান্তর কিছু না, কারন এ দেশের গ্রামে - গন্জে অনেক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় যার হিসাবের গণনার খাতায় উঠে না। তথ্যকোষের গরমিল নিয়ে চিন্তা না করে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার নিয়ে চিন্তা করাই শ্রেয় । 

বাংলাদেশের ৩৪৯২ কি.মি রাজপথ এবং ৪২৬৮ কি. মি আঞ্চলিক পথ।  এই দীর্ঘ পথ এই ঈদে মৃত্যু কূপে পরিণত হয়েছে। ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৩৯৯টি, নিহত ৪০৭ জন আর আহত হয়েছে ১০৩৮ জন। বর্তমান সরকার সড়কের অবকাঠামোগত লক্ষনীয় উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত মানু্ষ লাশ হওয়াতে, সরকারে লক্ষনীয় উন্নয়ন এখন প্রশ্নবিদ্ধ । ঈদে মানু্ষ নাড়ীর টানে আর মাটির মায়ায়, ছুটে চলে শিকড়ের কাছে। ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতি বছরেই বৃদ্ধি পাচ্ছে! সড়ক দুর্ঘটনায় এ দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার  মানু্ষকে সাদা কাপড়ে চিরবিদায় দিতে হয়। সাদা কাপড়ে শুধু মানু্ষটাকে সমাহিত করি না, সমাহিত করি তাঁর জীবনের সমস্ত স্বপ্ন এবং ভবিষৎকে । 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১৯২টি দেশের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্হান ৯০ তম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী এশিয়ার প্যাসিফিক অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে বাংলাদেশে নিহতের হার সর্বোচ্চ। সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অর্থনীতির জন্যও ডেকে আনছে সর্বনাশ।এক্ষেত্রে  ক্ষয় - ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির দুই শতাংশ।যা টাকার অংকে ৪০ হাজার কোটি টাকা।             বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, মহাসড়কের শতকরা ৬৯শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া বাস ও ট্রাক চালকরা দায়ী। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলি মনে করে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা অদক্ষ চালকদের কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।  শুধু অদক্ষ চালক দায়ী কেন ? দক্ষ চালক যখন বেশী অর্থ পাওয়ার লোভে রাতের পর রাত র্নিঘুম রাত কাটিয়ে গাড়ি চালায়, তখন দক্ষতা দিয়ে কি হবে  ?

এ ছাড়া লক্কড়ঝক্কর যানবাহন, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষীত, হেলপার থেকে ড্রাইভার সবমিলে অদক্ষ চালকেই বেশী । এ দুরাবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক । তবে এই সব লাইসেন্স বিহীন ও অদক্ষ চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও  বেতন ভাতাদি নিদিষ্ট করে দিতে হবে । নইলে জাতির দুর্ঘটনাজনিত অপূরণীয় ক্ষতি  আর কোন দিনেও পূরণের মুখ দেখবে না। 

বাংলাদেশের সড়কে অবৈধ হাট -বাজারের জন্য ২৮% সড়ক দুর্ঘটনা হয় আর রাস্তার মোড়ের জন্য হয় ১৮ % । আগে বের করতে হবে। কেন,  কোথায় এবং কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে ?    ব্ল্যাকস্পট গুলি নির্ণয় করতে হবে ।চালকরা গাড়ী চালানো অবস্থায় মোবাইল এবং ইয়ার ফোন ব্যবহার  কঠোরভাবে দমন করতে হবে । আমাদের প্রতিটি সড়কে নসিমন, বডবডি, করিমন, নানা রকমের ইঞ্জিল চালিত পরিবহন দুর্ঘটনার বিরাট কারন । এই সব স্বল্প গতি সম্পন্ন গাড়ীর জন্য আলাদা রাস্তা করে দিতে হবে । 

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিকাংশক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া গাড়ী চালানো  আর ওভারটেকিং দায়ী করা হলেও,  চালকদেরকে  জবাব দিহিতার  মধ্যে আনার কোনো উদ্যেগ  নেই। এই প্রতিকার বিহীন ও অবিচারের জন্য মাশুল দিতে হচ্ছে  জনগণকে । অথচ জাতিসংঘের কাছে সরকার বলেছিল ২০১১থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনবে।  কিন্তু চরম আশাহতের বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিক্ষণে প্রতিমুহূর্তে । বাস-ট্রাক মালিক ও চালকদের শক্তিশালী সংগঠনের জন্য সরকার আন্দোলনের ভয়ে শক্ত অবস্থান নিতে ব্যর্থ হচ্ছে  আবার আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে  ঘুষের সম্পর্কের কারণে চালকরা আইন অমান্য করতে সাহস পাচ্ছেন । দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এ জন্য সংশ্লিষ্ট চালকদের শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা একেবারেই বিরল। আইনের ফাঁক দিয়ে  অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘাতক চালকরা পার পেয়ে যায়।সড়ক দুর্ঘটনায় যেভাবে জীবনের অপচয় ঘটছে তা দুর্ভাগ্যজনক । আমার মতে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দায়িত্বশীলতার কোনো বিকল্প নেই। চালক হোক আর যাত্রী কিংবা পথচারী হোক দুর্ঘটনা  রোধে সবার মধ্যে দায়িত্বশীলতা গড়ে উঠলে, প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের অকাম্য মৃত্যুর মিছিল থামিয়ে দেওয়া যাবে। 

" সড়কের লাশ, দেশের অর্থনেতির সর্বনাশ " আমরা সকলেই সাবধানে রাস্তা পারাপার হবো এবং অতিরিক্ত যাএী হিসাবে বাসে উঠবো না  ।

 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image