মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ :
এবার আমন বীজের জন্য ময়মনসিংহের কৃষকদের মাঝে হাহাকার। জেলার কৃষকেরা দিনের পর দিন বিএডিসির বীজ বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়েও বীজ পাচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষ বলছে, বীজধানের সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ ওই কেন্দ্রের পাশের দোকানেই প্রতি ১০ কেজির বস্তা ৬ শ’ থেকে ৮ শত টাকা মূল্যে মিলছে বিএডিসির বীজধান। এ অবস্থায় বীজের দাবিতে গত রোববার নান্দাইল উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেছেন কৃষকেরা। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান জানান, বীজ সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রশাসনের শক্ত হস্তক্ষেপে অতিমূল্যে বিক্রয়কারী খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪৭০ বস্তা আমন ধানবীজ উদ্ধার করে সোমবার প্রকৃত কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা বিএডিসির বিক্রয়কেন্দ্রে কোনো জাতের বীজই পাচ্ছেন না। অথচ উপজেলার বিভিন্ন ডিলারের কাছে ঠিকই এসব বীজ পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চড়া দাম দিতে হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল মাজেদ জানান ময়মনসিংহ জেলায় এবছর ২ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় আমন বীজের চাহিদা ৫ হাজার ৫ শত মেট্রিক টন। তন্মধ্যে বিএডিসি থেকে এবছর প্রাপ্ত মোট বীজের পরিমাণ ১৪০২ মেট্রিক টন। যা মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া বেসরকারী ও কৃষক পর্যায়ে বীজের চাহিদাপূরণ করা হয়।
এ দিকে বিএডিসি (বীজ ) উপ-পরিচালক আইয়ুব উল্লাহ জানান, গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত মূল্যে বীজধান বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় কৃষকরা ডিলাদের দোকার ঘেরাও করে রাখে। সোমবার সরজমিন বিএডিসি (বীজ ) যুগ্ম-পরিচালক মোঃ রুহুল আমীন ও তিনি গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পরিদর্শন করেন। এসময় কর্মকর্তারা ডিলারদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সরকার নির্ধারিত ন্যায্য মূল্যে বীজ বিক্রির পরামর্শ দেন। কেউ অতি মুনাফা করে বীজ বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিএডিসি (বীজ ) আইয়ুব উল্লাহ জানান।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আসাধু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গত দুই দিনে ৪৭০ বস্তা আমন বীজের বস্তা উদ্ধার করে সোমবার প্রকৃত কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত ন্যয্যমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার নাসির উদ্দিন।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে নান্দাইল শহরের নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক কৃষকের ভিড়। তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে ঈদের আগেও বীজধান কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু তখন ঈদের পরে বীজধান দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। পরে বিক্ষোব্ধ কৃষকরা বীজের দাবীতে মানববন্ধন করে।
নান্দাইল উপজেলা বিএডিসি বীজ বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, বি-আর ৪৯ ছাড়া অন্য কোনো বীজধানের সংকট নেই। কৃষকদের মধ্যে এ জাতের বীজধানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলা থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ পেলে তা কৃষকদের সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আশপাশের দোকানে চড়া মূল্যে বিএডিসির বীজধান বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ কেউ অন্য জায়গা থেকে ওই বীজ সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করতে পারেন।
নান্দাইল উপজেলা বিএডিসি বিক্রয়কেন্দ্রের পাশের দুজন ডিলারের কাছে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলল। এ দুজন ডিলার হলেন আবদুর রাশিদ ও আবদুল কাদির। দুজনের দোকানেই বিএডিসির বীজধান বিক্রি হতে দেখা গেল। তবে দুজনই দাবি করেন, তাঁরা পাশের কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বীজ কিনে এনে বিক্রি করছেন।
অনুমোদিত ডিলার ছাড়া অন্য দোকানে চড়া মূল্যে বিএডিসির বীজধান বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি বিভাগের মনিটরিং (তদারকি) কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘বীজ উৎপাদন ও বিক্রির দায়িত্ব বিএডিসির। বিষয়টি তারাই দেখভাল করে। তবে আমরা বিষয়টি মনিটরিং করছি। কিছু দোকানকে জরিমানা করা হচ্ছে।’ তবে এ পর্যন্ত কতগুলো দোকানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি দিতে পারেননি।
ময়মনসিংহ/নজ