নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে মানসিক ভারসাম্যহীন সেলিম মিয়ার দুটি কিডনিই অক্ষত রয়েছে। শনিবার ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে তার পরিবারের ইচ্ছে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার। তবে আর্থিক অনটনের জন্য পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারছেনা বলে জানিয়েছেন সেলিমের স্বজনেরা।
নিখোঁজের পাঁচ মাস পর মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার থেকে উদ্ধার করা হলে সেলিম মিয়ার পেটে কাটা দাগের মত থাকায় স্বজনদের ধারণা হয় আশ্রয়দাতারা অস্ত্রপচার করে তার কিডনি নিয়ে গেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিবারের লোকজন শনিবার ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়।
শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ শহরের প্রান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। পরে রিপোর্ট দেখে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ হাসানুল হক আকাশ।
তিনি বলেন, ‘আলট্রাসনোগ্রামের পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়নি। দুটি কিডনিই ঠিক আছে। কিন্তু যে জায়গায় কিডনি থাকে সে জায়গায় ক্ষত থাকায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল পরিবারের। আমার ধারণা, রোগী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় আটকে রাখার জন্য কোনও কিছু দিয়ে বেঁধে রাখা বা বেল্ট পরিয়ে রাখার কারণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
চিকিৎসক সৈয়দ হাসানুল হক আকাশ আরও বলেন, ‘তার শরীরে রক্তস্বল্পতা রয়েছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একেবারেই কম। শরীর খুবই দুর্বল। পায়ে পানি জমেছে।’
তবে বেসরকারি এই ক্লিনিকের রিপোর্টের পরও সেলিম মিয়ার স্বজনদের মন থেকে শঙ্কা দূর হচ্ছে না। এজন্য তারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চান। তবে তাদের আর্থিক অসংগতি রয়েছে বলে জানান সেলিমের স্ত্রী ফাতেমা।
একই সমস্যার কথা উল্লেখ করে সেলিমের ছোট ভাই মাহিন মিয়া বলেন, "আমার ভাইয়ের অঙ্গহানি ঘটেছে কিনা তা অর্থাভাবে পরীক্ষা করাতে পারছিনা।"
খোজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাঁচাশী গ্রামের দিনমজুর হাসিম উদ্দিনের মানসিক ভারসাম্যহীন পুত্র সেলিম গত পাঁচ মাস পূর্বে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। বাবার অভাব-অনটনের সংসারে তাকে খুঁজে পাওয়ার মত আর্থিক কোন সংগতিই তাদের নেই। সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের ভয়ংকর প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং কিডনী সহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির মতো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় দেশব্যাপী এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
ঠিক সেই মূহুর্তে সেলিমের স্বজনরা ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলিমের ছবি চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে দেখতে পেয়ে মা-বাবা সহ তার স্বজনরা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। গত ৭ মে সেলিমের মা রাবিয়া, চাচাতো ভাই গ্রাম পুলিশ আঃ রশিদ সেলিমের সন্ধানে ঢাকা চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে গিয়ে তাকে চিনতে পারে। পরে থানা পুলিশের সহায়তায় সেলিমকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রম থেকে সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে উদ্ধারের ঘটনাটি জানার পর থানা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তবে সেলিমের পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: