• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

জামালপুরে যাত্রাপালা, মনে করিয়ে দিলো অতীত স্মৃতি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:৫৯ পিএম
জামালপুরে যাত্রাপালা, মনে করিয়ে দিলো অতীত স্মৃতি
যাত্রাপালা

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে যাত্রাশিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রতি বছরের মত এবারও লোকজ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা যাত্রাপালার আয়েজন করে। গত শুক্রবার রাত ৮ টায় জামালপুর শিল্পকলা একাডেমির বীরমুক্তিযোদ্ধা গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু মিলনায়তনে যাত্রাপালা স্বামীর চিতা জ্বলছে মঞ্চস্থ হয়।

লোকজ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি জীবন সাহার সভাপতিত্বে যাত্রাপালার উদ্বোধক করেন নিভৃতচারী নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ নূরল আলম সেলিম, প্রধান অতিথি ছিলেন জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান ছানা, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুজাত আলী ফকির।

এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, লোকজের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এসএম সোলাইমান, নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুল্লাহ ফারাজী, বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক সাযযাদ আনসারী প্রমূখ।

সাংসদ আবুল কালাম আজাদ অতীত স্মৃতি মনে করে বলেন, সুস্থধারার সংস্কৃতি ফিরে আসুক। আমি আপনাদের সাথে আছি। যাত্রা মানেই খড়ে মধ্যে বসে সারারাত কাটিয়ে দিয়ে, বিনোদন নিয়ে, একটি স্বপ্ন নিয়ে ভোরে চুপিচুপি বাড়ী ফেরা। এখন আমরা যাত্রা দেখি সোফায় বসে এবং ফ্রীতে। এটা কখনোই হওয়া উচিত নয়। তারপরেও ফিরে আসুক আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুজাত আলী ফকির বলেন, খুব ভাল লাগছে। যৌবনের স্মৃতি জেগে উঠলো। আমাদের এই শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যাত্রায় নোংরামি ঢুকিয়েছে একটা শ্রেণি। অসাধারণ এই শিল্পকে কিভাবে চোখের সামনে নষ্ট করে দিলো ভাবলে কষ্ট লাগে। যাত্রাশিল্পকে আবার মানুষের মাঝে উপস্থাপন করতে হবে। আমি লোকজকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা প্রতিবছর একটি করে যাত্রাপালা আমাদের মাঝে নিয়ে আসে।

লোকজের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এসএম সোলাইমান বলেন, গত বছরও আমরা একটি যাত্রাপালা করেছিলাম। এবারও একটি যাত্রাপালা আমরা মঞ্চে এনেছি। প্রতি বছরই লোকজ জামালপুরবাসীকে মঞ্চনাটকের পাশাপাশি যাত্রাপালা দেখানোর একটি উদ্যোগ আমরা হাতে নিয়েছি। আপনারা যদি সহযোগিতা করে যান তাহলে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব।

কবি সাযযাদ আনসারী কর্পোরেট সংস্কৃতিকে বানরের সংস্কৃতি উল্লেখ করে বলেন, বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে যে প্রয়াস সেজন্য লোকজ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে ধ্বংসের চেষ্ঠা করে যাচ্ছে কর্পোরেট। যেটা ৫২ সালে প্রতিহত করতে পেরেছিলাম কিন্তু বর্তমানে আমরা সেটা করতে পারছি না। আজ কর্পোরেটরা আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমাদের সন্তানদেরও আমরা সেটাই শিখাচ্ছি। আজকে যে বাঙ্গালী সংস্কৃতির অবক্ষয় সেটার জন্য শুধু কর্পোরেটরাই দায়ী নয় আমরাও দায়ী। যে সংস্কৃতি এবং ভাষার জন্য আমরা যুদ্ধ করলাম। সেই অপসংস্কৃতি আমাদের মাঝে এখনো বিরাজমান। আমাদের সংস্কৃতি দিয়ে এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। এটাই এখন সময়ের দাবী। ফিরিয়ে আনতে হবে যাত্রাশিল্পকে।

নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুল্লাহ ফারাজী বলেন, বিনোদনের ক্ষুধা নিবারন করেছি এই যাত্রাপালা দেখে। শিতের রাতে খড়ের মধ্যে গাদাগাদি করে বসে যাত্রা দেখেছি। এটাই আমাদের বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম ছিল। যাত্রাপালা আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম দিক।

যাত্রাপালার নির্দেশক ও লোকজ সভাপতি জীবন সাহা বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই যাত্রাপালা। আজ এই সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা লোকজ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি এই সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে।

যাত্রাপালায় আসা একজন প্রবীণ দর্শনার্থী যাত্রাপালা স্বামীর চিতা জ্বলছে দেখতে দেখতে আবেগে আপ্লূত হয়ে কেঁদে ফেলে বলেন যাত্রা হচ্ছে  আমাদের সমাজের দর্পণ। সারারাত যাত্রাপালা দেখে বাড়ী ফিরেছি বিনোদন নিয়ে, একটা স্বপ্ন নিয়ে। এই সোনালী অতীত আর খুঁজে পাইনা। খুব কষ্ট লাগে এই সুন্দর অতীত, যাত্রাপালাতে নষ্টামি এনে ধ্বংস করে দিয়েছে একটা চক্র। যাত্রাপালা দেখতে দেখতে মনে হয়েছে এটা আমার পরিবার, সমাজ, বাস্তবতা।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image