নিউজ ডেস্ক: এবারের আগে যে দশবার ইউরোপে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল, তার নয়টিতেই শিরোপা জিতেছিল এই মহাদেশের কোনো না কোনো দেশ। ব্যতিক্রম একবারই। ১৯৫৮ সালের সুইডেন বিশ্বকাপ। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পেলের ব্রাজিল। এবারের আয়োজক পূর্ব ইউরোপের রাশিয়া। বলা হচ্ছিল, বাইরের মহাদেশের কেউ যদি শিরোপা জেতে সেটা ব্রাজিলই হবে। কিন্তু শুক্রবার রাতে বেলজিয়ামের কাছে হেরে কোয়ার্টার থেকেই বিদায় নিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
রাশিয়া বিশ্বকাপে টিকে থাকা সর্বশেষ লাতিন দেশ ছিল ব্রাজিল। তার আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তর আমেরিকা ও এশিয়া এবং প্রথম রাউন্ডে আফ্রিকা মহাদেশের দলগুলো বিদায় নিয়েছিল। যার অর্থ, বিশ্বকাপ হয়ে গেছে এখন একান্তই ইউরোপের। ১৫ জুলাই শিরোপা কে হাতে তুলবে, তা হয়তো অজানা। তবে এটি নিশ্চিত যে, টানা চতুর্থ এবং সব মিলিয়ে ১২তম শিরোপাটি ঘরে তুলতে যাচ্ছে ইউরোপ।
একদিক থেকে অবশ্য ইউরোপের আধিপত্যের বিষয়টি স্বাভাবিকই। অংশগ্রহণকারী ৩২ দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশ অংশ নিয়েছে ইউরোপ থেকেই- ১৪টি। এর মধ্যে মহাদেশীয় বরাদ্দে ১৩টি, অন্যটি কন্টিনেন্টাল প্লে-অফ জিতে। রোববার রাতে ব্রাজিলকে হারিয়ে বেলজিয়াম, তার আগে উরুগুয়েকে হারিয়ে ফ্রান্স সেমিফাইনালে ওঠে। সেমিফাইনালের বাকি দুই স্পটের জন্য গতরাতে যে চরটি দল মাঠে নেমেছে, এর সবক’টিই ইউরোপের। সাবেক ইংলিশ ফুটবলার গ্যারি লিনেকার তাই মজার ছলে টুইট করেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড কাপ এখন ইউরোপিয়ান কাপ।’
বিশ্বকাপে সর্বশেষ অল-ইউরোপিয়ান সেমিফাইনাল হয়েছিল ২০০৬ সালে। জার্মানিতে হওয়া সেই আসরে শেষ চারে খেলেছিল জার্মানি, ইতালি, পর্তুগাল ও ফ্রান্স। তার আগে অল-ইউরোপিয়ান সেমি হয় ১৯৩৪, ১৯৬৬ ও ১৯৮২ সালে। ইউরোপিয়ান দলের বাইরে শিরোপা জিতেছে সর্বশেষ ব্রাজিল, ২০০২ সালে। এর পরে ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে এখন পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপের সবকটি শিরোপাই যাচ্ছে ইউরোপের কাছে। এর মধ্যে ২০১০ বিশ্বকাপ হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকায়, ২০১৪-তে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। গতবার জার্মানি শিরোপা জিতলেও ফাইনালে ছিল লাতিনের দেশ আর্জেন্টিনা। এবার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের কেউ সেমিতেও নেই।
এদিকে, এ পর্যন্ত হওয়া ২০টি বিশ্বকাপের ১৭টি ভাগ করে নিয়েছে যে পাঁচটি দেশ, তাদের কেউই এবার ফাইনালের লড়াইয়ে নেই। চারবারের বিশ্বজয়ী ইতালি বাদ পড়ে গেছে বাছাইপর্বেই। আরেক চারবারের জয়ী জার্মানি বিদায় নিয়েছে প্রথম রাউন্ড থেকে। দু’বার করে জেতাদের মধ্যে আর্জেন্টিনার বিদায়ঘণ্টা বেজেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে, উরুগুয়ের কোয়ার্টারে। শেষ প্রতিনিধি হয়ে থাকা ব্রাজিলও দেশের টিকিট নিশ্চিত করেছে শেষ আটেই।
২০২৬ বিশ্বকাপ থেকে ফিফা যে নতুন ফরম্যাট চালু করতে যাচ্ছে, সেখানে ফাইনাল-সেমিফাইনালে লাতিনের দেশগুলোর উপস্থিতি বাড়তেও পারে। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওই আসরে খেলবে ৪৮টি দেশ। ইউরোপ থেকে ১৬টি, আফ্রিকা থেকে ৯টি, এশিয়া থেকে ৮টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৬টি করে দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত। একটি করে বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে মহাদেশীয় প্লে-অফের ভিত্তিতে। তবে তার আগ পর্যন্ত বিশ্ব আসরে ইউরোপের রাজত্বই বেশি দেখা যেতে পারে। চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপে তো অবশ্যই।