নিউজ ডেস্ক : বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া আট মাসের শিশু সন্তান ফাতেমার অভিভাবকত্ব পেলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক ) আইনজীবী সেলিনা আক্তার।
জর্ডান ফেরত এক নারীর এই শিশুকে পেতে আদালতে আবেদন করেছিলেন আরও আট দম্পতি। সবার বক্তব্য শুনে বুধবার ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টির সিদ্ধান্ত নেন।
আদালতের আদেশের পর খুশিতে আপ্লুত সেলিনা আক্তার বলেন, “আমি ওর কোমল মুখ থেকে মা ডাক শুনতে চাই। তারপর বড় হয়ে মা-বাবার বিষয়ে ওর সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”
ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা, আইনজীবী সেলিনা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সিনিয়র ‘ল’ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্বামী মো. আলমগীর হোসেন একজন ব্যবসায়ী।
শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য, এই দম্পতিকে ফাতেমার নামে পাঁচ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) কেনার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বর্তমানে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আশ্রিত শিশুটিকে আগামী ২২ অগাস্ট সেলিনা-আলমগীর দম্পতির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ৮ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরা জয়দেবপুরের স্বপ্না বেগম শিশুটিকে পুলিশের কাছে নিয়ে যান।
সে সময় স্বপ্না বেগম বলেন, এই শিশুর মা তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে ঢাকা আসেন। ওই নারীও তারই মতো গৃহকর্মী হিসেবে জর্ডানে গিয়েছিলেন বলে আলাপচারিতায় জানতে পারেন।
ঢাকা বিমানবন্দরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে বিমানবন্দরের ক্যানওপি পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্না। এ সময় ওই নারী শিশুটিকে তার হাতে দিয়ে বলেন, “আপা আমার শিশুটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি।”
এরপর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও শিশুটির মা না আসায়, স্বপ্না আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যদের কাছে যান। তারা শিশুসহ স্বপ্নাকে বিমানবন্দর থানায় পাঠান।
ওইদিনই বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি হওয়ার পর শিশুটিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। পরে সেখানে শিশুটির নাম দেওয়া হয় ফাতেমা।
এরপর ২৫ জুলাই শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।
৯ অগাস্টের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়ার দিন রেখে প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে, শিশুটিকে নিতে আগ্রহী কোনো দম্পতিকে বাছাই করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।
ওই দিন নয় দম্পতি শিশু ফাতেমার অভিভাবকত্ব নিতে আদালতে আবেদন করেন।
পরে শিশুটির বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়ার কথা আদালতকে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদ।
আবেদনকারীদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও বিমানের কর্মকর্তা ছিলেন।
এই আদালতের সহকারী পিপি শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, আবেদনকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ বিমানের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে থেকেছেন এমন এক দম্পতি, একজন সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দম্পতিসহ আরও পেশাজীবী ছিলেন।
বিচারক ওই সব দম্পতির বক্তব্য পৃথকভাবে খাস কামরায় বসে শোনেন। এরপর আদেশ দেন।
আদেশের আগে বিচারক বলেন, যারা আবেদন করেছেন তারা সভাই শিশুটিকে হেফাজতে পাওয়ার যোগ্য। অনেক দম্পতি শিশুটির নামে বাড়ি-গাড়ি পর্যন্ত লিখে দিতে চেয়েছেন। তবে আদালত শুধু অর্থ সম্পদ বিবেচনা করে আদেশ দিচ্ছে না। শিশুটির সার্বিক মঙ্গল বিবেচনায় নিয়ে আদেশ দিচ্ছেন। আর ভবিষ্যতে যদি শিশুটির বাবা-মা পাওয়া যায় এবং তারা দাবি করেন তাদের হাতে তখন শিশুটিকে তুলে দিতে হবে।
আদালতের সহকারী পিপি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, “সেলিনা যেহেতু আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী, তিনি শিশুদের নিয়ে কাজও করেন। তার আয় ও ঢাকায় নিজস্ব সম্পত্তি ও বাড়ি রয়েছে। সে কারণে তার কাছেই এ শিশুর জিম্মা দেওয়া হয়েছে,”।
এখন সেলিনা-আলমগীর দম্পতির কাছে ওই শিশুর অভিভাবকত্বের বিষয়টি বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে।