কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:- প্রান্তিক চাষিদের ধান যাচ্ছে ফড়িয়া-আড়তদারদের পেটে কিশোরগঞ্জের চার উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কড়া রোদে কিষান-কিষানিদের ধান কাটা, ধান শুকানো, মাড়াইয়ের অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়ছে।
পুরুষের পাশাপাশি খলায় নারী শ্রমিকদের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটাকে কৃষকরা ‘জাদুর মেশিন’ নাম দিয়ে বলেছেন, এ মেশিন নামায় প্রতি ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটতে ৬০০-৭০০ টাকা বেঁচে যাচ্ছে। সময়ও বেচে যাচ্ছে প্রচুর। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকের মনে খুশি নেই। ফরিয়া ও আড়তদাররা ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছে গত সপ্তাহে।
বর্তমানে খলায় ধান বিক্রয় হচ্ছে প্রতি মণ ৮০০-৯০০ টাকায়। অথচ কয়েক দিন আগেও এ ধানের দাম ছিল হাজার টাকার বেশি। ধানের দাম পড়ায় বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকরা লোকসানে পড়েছেন। সরকার প্রতি মণ ধানের মূল্য ১ হাজার ২৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও সরকারি গুদামে সেই মূল্য পেতে ৭ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরই মধ্যে প্রান্তিক চাষিদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ঋণের টাকা পরিশোধ ও পাওনাদারদের হয়রানি থেকে বাঁচতে কৃষক কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন কষ্টের ধান। শাল্লার কৃষক মাখন লালসহ অনেকেই জানালেন, মৌসুমের আগে ৭২০ টাকা হিসেবে প্রতি মণ ধানের দাম নির্ধারণ করে ঋণ এনেছিলেন। এখন ঐ দামেই ধান মেপে নিচ্ছে তারা। কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওরে ধান কাটা অর্ধেক শেষ। চাষাবাদের দেনা ও ধান কাটা-মাড়াইয়ের খরচ মেটাতে কম দামে ধান বিক্রি করছেন কৃষক। খলা থেকে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে ফড়িয়া: ৩-৮ মে পর্যন্ত সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করলেও সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়নি। সুযোগে ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার চাতালের ফড়িয়ারা বালিখলা ঘাট ও চামড়া বন্ধরের ঘাটে নৌকা লাগিয়ে খলা থেকে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ কৃষকই দেনা ও খরচ মেটানোর জন্য নিজের ৬৫ ভাগ ধান বিক্রি করে ফেলছেন। কৃষকের যখন টাকার প্রয়োজন, তখন সরকারিভাবে ধান কেনা হয় না। কৃষকের যখন টাকার প্রয়োজন, তখন সরকারিভাবে ধান কেনা হয় না। সরকার যখন ধান কেনা শুরু করে, এর আগেই কৃষকের ধান বেচা শেষ হয়ে যায়। এতে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের কাছে সব ধান চলে যায়।
এছাড়া নীতিমালার মারপ্যাঁচের কারণে সরকারের কাছেও ধান বিক্রি করতে পারছে না কৃষকরা। মধ্যনগরের একজন ব্যাপারী বলেন, আমরা মহাজনের চাকরি করি, তারা যেভাবে নির্দেশনা দেন, সেভাবে কাজ করি। মধ্যনগরের ৩৪ জন আড়তদার এখন গড়ে ৫০০-৬০০ মণ ধান প্রতিদিন কিনছেন। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা: বাংলাদেশের বেশির ভাগ জেলার ওপর দিয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখী, তীব্র বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে সারা দেশ। হাওরে কিছুটা বৃষ্টির দেখা মিললেও গরমে অস্থির মাঠঘাট। আবহাওয়ার খবরে মে মাসের প্রথমার্ধে কিশোরগঞ্জও পার্শ্ববর্তী হাওরাঞ্চল পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা দুঃশ্চিন্তায়।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: