জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দূরমুট এলাকায় চলছে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা। জানা যায়, ইয়েমেন থেকে আগত হযরত শাহ কামাল (রহ:) এর মাজারকে কেন্দ্র করে পাঁচশ বছর চলে আসছে এই বৈশাখী ওরশ মেলা। প্রতি বছর বাংলা বৈশাখ মাসে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। দেশ-বিদেশের বহু ভক্তের আগমনে মুখরিত থাকে পুরো মাস এই মেলা প্রাঙ্গণ। যা শুরু হয় বৈশাখ মাসের প্রথম দিন এবং শেষ হয় বৈশাখ মাসের শেষ তারিখে অর্থাৎ একটানা ৩০ দিন চলে এই মেলা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখানে রয়েছে প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ দোকান। আনুমানিক প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লোকের সমাগম হয়ে থাকে এই মেলায়। দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত রয়েছে মেলার বিশাল কর্মযজ্ঞ। মেলায় আসা বিভিন্ন ভক্তরা এখানে প্রকাশ্যে বসিয়েছে গাঁজার আসর কেউবা গাঁজা বিক্রি করছে খোলা আকাশের নিচে পাটি বিছিয়ে। অবাধে গাজা সেবন করছে বিভিন্ন বয়সের কিশোর তরুণ এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, এখানে গাজা বিক্রি ও সেবন চলছে অবাধে, সারাদিন-রাতব্যাপি চলে উচ্চস্বরে গান বাজনা। রাত গভীর হলেই অশ্লীল নৃত্যসহ আরো অনেক অশ্লীলতার কথা জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দারা ঢাকা নিউজ ২৪কে জানান, দুরমুঠ এলাকার মানুষ খুব শান্তি প্রিয়। ওরশকে কেন্দ্র করে এই মেলা আমাদের ঐতিহ্য। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ বৈশাখের এই একমাস এলাকাবাসীর শান্তি কেড়ে নেয় মেলার কার্যক্রম। সারারাত গান বাজনার উচ্চ আওয়াজের কারণে এলাকার কেউ ঘুমাতেও পারে না। স্বল্প মূল্যে গাঁজা পাওয়া যাচ্ছে এই মেলায় যার কারণে তরুণ ও কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ২০ থেকে ৩০ টাকা দিয়েই গাঁজা ক্রয় করে প্রকাশ্যে সেবন করছে। পাঁচশ বছর ধরে মেলাটি এখানে হচ্ছে। ইতিপূর্বে আমরা এবিষয়ে কোন অভিযোগ করিনি কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই অশান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মেলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক ঢাকা নিউজ ২৪কে জানান, ছেলে-মেয়েরা উচ্চ আওয়াজের কারনে পড়াশুনা করতে পারে না। রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। আমাদের জন্য অশান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মেলা। মেলার নামে এগুলি বন্ধ করতে হবে।
এদিকে মেলার নামে মাদকের এই আখড়া বন্ধের দাবীতে গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে মেলান্দহ পৌর শহরে ইত্তেফাকুল উলামা নামে একটি সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে। মাজারকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার নামে অশ্লীল নৃত্য, গান-বাজনা ও মাদক সেবন বন্ধের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করে।
এবিষয়ে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেছিল, ‘প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে বৈশাখী মেলায়।পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই জানলেও কেউ এসব অপকর্ম বন্ধ করছে না। মেলায় প্রায় ৫০ টি গাঁজা বিক্রির দোকান রয়েছে। প্রতিদিন রাতে ওই মেলায় চলে অশ্লীল নৃত্য, মাদক বেচাকেনা, জুয়ার আসর। এসব অপকর্মের ফলে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মেলা কমিটির সভাপতি ও দুরমুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরিকে মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবা হক ঢাকা নিউজ ২৪কে বলেন, আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমাদের পুলিশ তাদের টহল অব্যাহত রেখেছে। আমি মেলান্দহ থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোর্স বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। কয়েকদিন আগেও মেলা থেকে পুলিশ ১১ কেজি মাদকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া আমি নিজেও কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: